সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রোজার উপকারিতা


কেন আমরা রোযা রাখব?

আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জাতের দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া যিনি আমাদের কে সৃষ্টি জগতের সেরা সৃষ্টি জীব মানুষ হিসেবে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। তার সাথে সাথে দুরুদ ও সালাম প্রেরণ করছি সেই আল্লাহর প্রিয় হাবিবের নিকট যাকে সৃষ্টি না করলে এই পৃথিবীই সৃষ্টি করতেন না।

আজকে আমার লেখার বিষয় হলো কেন আমরা রোযা রাখব সম্মানীত পাঠকবৃন্দ- মুসলমান হিসেবে যদি আমি নিজেকে দাবি করি তাহলে মনগড়া চলার কোনো সুযোগ নেই। কোরআন, হাদিসের যে বিধান সেই বিধান আপনাকে মেনে চলতে হবে। আর যদি আপনি মনে করেন, আমি আমার মনগড়া মতো চলব, তাহলে চলতে পারবেন, কোনো সমস্যা নেই। তবে মনে রাখবেন এর পরিণতি আপনার ভালো হবে না। দুনিয়াতেও ভালো হবে না, আখেরাতেও ভালো হবে না। কুরআন, হাদিসের বিধানের মধ্যে রোযাও একটি বিধান। নিজেকে মুসলমান দাবি করলে রোযা আপনাকে রাখতেই হবে। এখানে কোনো তালবাহানা চলবে না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, রোযা না রাখার জন্য অনেকেই বাহানা ধরে। যেমন ডায়াবেটিস, পেটব্যাথা, হাঁপানি, প্রেসার, লো-প্রেসার ইত্যাদি । আপনি মনকে শক্ত করে দৃঢ় প্রত্যয় নিন, আমি মরে গেলেও রোযা ভাঙব না। তাহলে দেখবেন যত কঠিনই হোক না কেন তা সহজ হয়ে যাবে (ইনশাআল্লাহ)। কোন এক লোক বলেছিলেন রোযা অবস্থায় আমি মরে গেলেও রোযা ভাঙব না, তোমরা আমার মুখে পানি দিও না (সুবহানাল্লাহ)।

আল্লাহ রব্বুল ইজ্জত রোযাকে আমাদের ওপর ফরয করলেন কেন : আমরা ১১ মাস দিনের বেলায় পানাহার করি, আর একটি মাস দিনের বেলায় আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত পানাহার নিষেধ করেছেন, এর পেছনে রহস্য কি? আল্লাহর হেকমত কি? চিন্তা-গবেষণা করলে দেখা যায়, আমাদের ভালোর জন্যই আল্লাহ পাক ১২ মাসের মধ্যে মাত্র একটি মাস রোযা ফরয করেছেন।
হযরত আবু হুরায়রাহ (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, তোমরা রোযা রাখ তাহলে তোমরা সুস্থ থাকবে (তাবারানী)।
রোযার ব্যাপারে বিশ্বখ্যাত কতিপয় মনীষীর অভিমত নিম্নে  উপস্থাপন করা হলো-
আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট এবং এরিস্টটল এ দুজই ছিলেন গ্রিসের অধিবাসী, নিজ নিজ ক্ষেত্রে তারা বিশ্ববিখ্যাত। তারা মাঝে মধ্যে ক্ষুধার্ত বা উপবাস থাকাকে দেহের সুস্থতা-সবলতার জন্যে খুবই প্রয়োজনীয় বলে মনে করতেন।

আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট বলেন,আমার জীবন অনেক ব্যতিক্রমধর্মী অভিজ্ঞতা এবং ঘটনা-দুর্ঘটনা অতিবাহিত হয়েছে। যে ব্যক্তি সকাল সন্ধ্যায় দুবেলা আহার করে সে রোগমুক্ত স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করতে পারে। আমি ভারতে এরকম প্রচুর - উষ্ণ এলাকা দেখেছি, যেখানে সবুজ গাছপালা খরতাপে পুড়ে গেছে, কিন্তু সেই তীব্র গরমের মধ্যেও আমি সকালে এবং বিকালে দুই বেলা খেয়েছি। সারা দিন কোনো প্রকার পানাহার করিনি। এর ফলে আমি নিজের ভেতর অনুভব করছি এক ধরনের নতুন সজীবতা এবং অফুরন্ত প্রাণ শক্তি।ওরা মুসলমান না হয়ে যদি রোযা সম্পর্কে এত সুন্দর কথা বলতে পারে তাহলে আমরা মুসলমান হয়ে কেন রোযা রাখব না ?

রোযা রাখলে এক কাজে দুই কাজ
(এক)  আপনি আল্লাহর হুকুম পালন করলেন, আমল নামায় ছোয়াব লেখা হবে।
(দুই) আপনি শারীরিকভাবে অনেক সুস্থ হয়ে যাবেন। হতে পারে এই রোযার ওছিলায় অনেক কঠিন রোগ ভালো  হয়ে যাবে (ছুবহানাল্লাহ)।

মহাত্মা গান্ধীর ইচ্ছা : মহাত্মা গান্ধীর উপোস থাকার ঘটনা সর্বজনবিদিত। ফিরোজ রাজ লিখিত গান্ধী জীবনে একথা লেখা রয়েছে যে, তিনি রোযা রাখা পছন্দ করতেন। তিনি বলতেন, মানুষ খাবার খেয়ে নিজের দেহ ভারি করে ফেলে। এই ভারি অলস দেহ দুনিয়ার কোনো কাজে লাগে না। যদি তোমরা তোমাদের দেহ সবল এবং কর্মক্ষম রাখতে চাও তবে দেহকে কম খাবার দাও। তোমরা উপোস থাক। সারাদিন জপতপ করো আর সন্ধ্যায় বকরির দুধ দিয়ে উপবাস ভঙ্গ কর।

এক প্রবাসীর ঘটনা : তিনি বলেন আমি যখন ফ্রান্স গিয়েছিলাম, তখন ছিল রমযান মাস। আমাকে রোযা রাখতে হবে, তারাবীহ আদায় করতে হবে। আমার প্রফেসরকে  আমি বললাম, আমাকে এক মাসের ছুটি দিন। তিনি বললেন কেন ছুটি নেবে? আমি বললাম আমাকে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করা সম্ভব হবে না। তিনি বললেন, এখানে কাছাকাছি একটি জায়গার কথা আমি তোমাকে বলে দিচ্ছি। তারপর তিনি আমাকে একটি জায়গায় নিয়ে গেলেন। আমি দেখলাম যাদের কাছে আমাকে নেয়া হয়েছে তাদের প্রায় সকলেই মুখে দাড়ি, মাথায় পাগড়ি, পরিধানে জোব্বা। কেউ মেসওয়াক করছে, কেউ ওযু করছে, কেউ আযান দিচ্ছে, কেউ নামায আদায় করছে। একজন কুরআন পাঠ করছে অন্য কয়েকজন মনোযোগ দিয়ে শুনছে। তারা সবাই রমজানে রোযা পালন করছে। রমযানের শেষ দিকে ইফতার করছে। তারা শেষ রাতে ও সন্ধ্যায় নিয়মতো সেহরী ও ইফতার করে। আমি তাদের সাথে সেখানে রমযানের সকল এবাদত বন্দেগী পালন করলাম। আমি আমার প্রফেসরকে ধন্যবাদ দিয়ে বললাম, আপনি আমাকে এমন লোকদের সঙ্গে নিয়ে গেছেন যাদের সংস্পর্শে থেকে আমার রমজান মাস ভালই কেটেছে। প্রফেসর আমার কথা শুনে হাসলেন। আমি তার হাসির কারণ জানতে চাইলে তিনি বললেন, তুমি কি জান ওরা কারা? ওরা সবাই ইহুদী। তাহলে এই অবস্থা কেন? তখন জনাব প্রফেসর বললেন, তারা একটি প্রকল্পের অধীনে কাজ করছে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, মুসলমানরা এক মাস রোযা পালন করে। আমরাও এক মাস পালন করে দেখি ইসলামের বিধান অনুসরণে কী কী উপকারিতা রয়েছে। যদি কল্যাণকর কিছু পাওয়া যায় তাহলে আমরা ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে যাব।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিস্ময় : অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র প্রফেসর ফোরপান্ড বলেছেন, আমি ইসলাম সম্পর্কে মোটামুটি লেখাপড়া করার চেষ্টা করেছি। রোযা অধ্যায়ে লেখাপড়া করার সময়ে আমি খুবই মুগ্ধ ও অভিভূত হয়েছি। চিন্তা করেছি ইসলাম তার অনুসারীদের জন্যে এক মহান ফর্মুলা দিয়েছে। ইসলাম যদি তার অনুসারীদের অন্য কোনো বিধান না দিয়ে শুধু এ রোযাই দিতো তবু এর চেয়ে বড় নেয়ামত আর কিছু হতে পারে না। বিষয়টি নিয়ে আমি একটু গভীরভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার চিন্তা করলাম। তাই বাস্তব অভিজ্ঞতার জন্যে আমি মুসলমানদের নিয়মে রোযা পালন করতে শুরু করি। দীর্ঘদিন যাবত আমি পাকস্থলীর গোলমালে ভুগছিলাম। রোযা রাখার কয়েক দিনের মধ্যেই  আমি বেশ সুস্থবোধ করতে শুরু করলাম। দেখলাম, রোগ অনেকটাই কমে গেছে। আমি রোযা চালিয়ে যেতে লাগলাম। এতে দেহে আরো কিছু পরিবর্তন অনুভব করলাম। কিছুদিন পর লক্ষ্য করলাম আমি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছি। এক মাস পরে নিজের মধ্যে আমি আমূল পরিবর্তন অনুভব করলাম।

পোপ ঈলপগলের অভিজ্ঞতা : পোপ ঈলপগল ছিলেন পোল্যান্ডের বিশিষ্ট পাদ্রী। রোযা সম্পর্কে তিনি নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনায় বলেন, যারা আমার আধ্যাত্মিক অনুসারী তাদের আমি প্রতি মাসে তিন দিন রোযা রাখার আদেশ দিচ্ছি। এ পদ্ধতির মাধ্যমে আমি যে শারীরিক সুস্থতা অনুভব করেছি তা ভাষায় অবর্ণনীয়। আমার দেহ অভাবনীয়ভাবে সতেজ হয়ে উঠেছে। আমার অনুসারীরা আরো কিছু দিকনির্দেশনার জন্যে আমায় পীড়াপীড়ি করে, যে সব রোগের কোনো ঔষধ নেই সে সব থেকে আরোগ্য লাভের জন্যে আমি তাদের তিন দিন নয় বরং এক মাস রোযা রাখার পরামর্শ দিয়েছি। যে সব রোগীরা ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং পাকস্থলির বিষয়ে অসুস্থ হয়েছেতাদের জন্যে আমি একমাস রোযা পালনের ব্যবস্থা দিয়েছি। এক মাস রোযা রাখার ফলে অনেকের বহুমুত্র বা ডায়াবেটিস রোগ নিরাময় হয়েছে হৃদরোগীদের অস্থিরতা এবং নিঃশ্বাস ফুলে যাওয়া কমে গেছে। পাকস্থলির রোগীদের উপকার হয়েছে সবচেয়ে বেশি।

ফ্র্যাঞ্জিজের ডাক্তার লোথার জিমের মন্তব্য : এ ডাক্তার ছিলেন ফার্মাকোলজি বিশেষজ্ঞ। সব কিছু গভীরভাবে দেখা এবং পর্যালোচনা করা ছিল তার স্বভাব। তিনি রোযাদার ব্যক্তির খালি পেটের খাদ্যনালির লালা (স্টোমাক সিক্রেশন) সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করেন। এতে তিনি বুঝতে পারেন রোযার মাধ্যমে ফুড পার্টিকেলস সেপটিক সম্পূর্ণ আরোগ্য হয়ে যায়। পরীক্ষার পর ডাক্তার লোথার মন্তব্য করেছেন, রোযা হচ্ছে দেহের অসুস্থতায় বিশেষত পাকস্থলির রোগে স্বাস্থ্যের গ্যারান্টি।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

‘হুদ হুদ’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত

ঘূর্ণিঝড় ‘ হুদ হুদ ’ উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এটি অবস্থান করছে পশ্চিম মধ্যবঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পূর্ব মধ্যবঙ্গোপসাগর এলাকায়। ·          অগ্রসর হচ্ছে ‘ হুদ হুদ ’, সাগরে সতর্কতা সংকেত ·            ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম , কক্সবাজার , মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সর্তকতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার বুলেটিনে এ তথ্য দেওয়া হয়। এতে বলা হয় , ঘূর্ণিঝড়টি সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে , কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯১০ কিমি দক্ষিণপশ্চিমে , মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৮০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৮৭০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছে। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। এ সময় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কিমি থেকে ...

রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলের সম্ভাব্য পরিণতি!!!

সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম তুলে দিলে আমরা যে সকল সমস্যার সম্মুখীন হতে পারি ➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖ শুধুমাত্র লাইক, কমেন্ট, শেয়ার, কপিই নয়! সম্ভব হলে লিফলেট ছেপে লেখাটি ছড়িয়ে দিন!! : রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলে সমস্যা কোথায়? প্রশ্নবানে জর্জরিত হচ্ছি, সমস্যা কোথায়? প্রশ্ন আসছে সব শ্রেণী থেকে। প্রথম কথা হচ্ছে, কেউ আমার হাত কাটলেও ব্যথা পাই, আঙুল কাটলেও। কারণ হাত-পা সবই আমার! ইসলামী বিধান প্রতিষ্ঠিত নাই বলে সংবিধান থেকেও মুছে দিতে হবে? হাত কাটা রুখতে পারি নি বলে পা কাটারও সুযোগ দেবো? কারো শরীরে অনুভূতি না থাকলে সেটা তার ব্যাপার, আমি কালিমা পড়েছি, দ্বীনের যে কোন বিষয়ে আঘাত আসলে আমার কলিজায় লাগে! এবার আসল কথায় ফিরে যাই; ক. ইসলামী শরী’আহ হচ্ছে কোন বিধান পালন না করলে আপনি গুনাহগার, বেঈমান নন, কিন্তু অস্বীকার করলে বেঈমান। সংবিধান থেকে সরিয়ে দেওয়ার অর্থ হচ্ছে আপনি অস্বীকার করছেন! খ. বুদ্ধিমানদের কাজ হচ্ছে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া, আপনি কামাল আতার্তুকের তুরস্কের ইতিহাস পড়ুন, বুঝবেন কেন আমাদের এতো মাথাব্যথা! গ. প্রধানমন্ত্রী তনয় ও আইটি উপদেষ্টা জয় সাহেবের সে বক্তব্...
ইসরাইলি পণ্যকে হালাল বলা , মাজহাব মানা হারাম ও শিরক বলা সহ আরও আনেক লাগামহীন কথার নায়ক ইহুদীদের দালাল এই ইবলিস- কে একটু শিক্ষা দিয়ে আসুন । https://www.facebook.com/md.rohan.7359447?ft[ego_id]=100007949353950&ft[qid]=6035260132232542925&ft[mf_story_key]=627004182696301145&ft[ei]=&ft[fbfeed_location]=1&ft[insertion_position]=1&__md__=1