তপ্ত বৃষ্টির ফোঁটার মতো পড়ছিল ট্যাংকের গোলা
গাজার আশ-শিফা হাসপাতালের গেটের সামনে
অস্থিরভাবে অ্যাম্বুলেন্সের অপেক্ষা করছিলেন মোহাম্মদ আল শেখ খাইল (৩৬)।
শুজাইয়েতে নির্বিচার ইসরাইলি গোলাবর্ষণে যে কয়েকজন বেঁচে গেছেন তিনি তাদের
একজন। ভিড় ঠেলে অ্যাম্বুলেন্সটি আসতেই সেটি তার সন্ত্রস্ত্র
চোখে পড়ল সাথে সাথেই।
গাড়িটির দরজা খুলে একটি মৃতদেহ বের করা হলো। তিনি কান্নায় ভেঙে পড়লেন। ছোট্ট মুখটি যে তার অতি পরিচিত। তিনি পাগলের মতো বলতে থাকলেন, ‘সামিয়া আল শেখ খাইল!’ তিন বছরের সামিয়ার দেহটি ঝাঁজরা করে দিয়েছে ইসরাইলি ট্যাঙ্কের গোলা। অতি পরিচিত হওয়ার কারণে পুরোপুরি ক্ষতবিক্ষত দেহটি চিনতেও তার কোনোই সমস্যা হয়নি।
তিনি শুনেছেন, সাদা কাফনে মোড়ানো দেহটি তার এক কাজিনের। তিনি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলছিলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছিলাম দৌড়ে পালাতে। কিন্তু আমরা যেখানেই যাচ্ছিলাম, আমাদের লক্ষ্য করে ট্যাঙ্কের গোলা ছোড়া হচ্ছিল।’
‘ভোর ৬টার দিকে আমি ছিলাম বাড়ির ভেতরে। একটা বিস্ফোরণের পর প্রতিবেশীদের চিৎকার শুনতে পেলাম। তাদের উদ্ধারের জন্য বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসি। কিন্তু যা দেখলাম, তা হলো কিয়ামত : নারী, শিশু সবার দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে।’
গাজা সিটির পূর্ব দিকের এলাকার নাম শুজাইয়ে। ১৪ দিন আগে হামলা শুরুর পর সেখানেই হয়েছে সবচেয়ে নৃশংস আক্রমণ। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, রোববার সেখানে ৭২ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের প্রায় সবাই নারী, শিশু ও বৃদ্ধ মানুষ।
খাইলের মতো কয়েকজন কিভাবে বেঁচে গেছেন, সেটাই আশ্চর্য ব্যাপার।
ইসরাইলি হামলা শুরু হওয়ামাত্র সেখানকার লোকজন সাদা শার্ট, আন্ডারশার্ট, টেবিলকোথÑ সম্ভব সব ধরনের সাদা কাপড় জোগাড় করে দোলাতে লাগলেন যাতে তাদের ওপর গোলাবর্ষণ না করা হয়। অন্তত তারা সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে পারেন, সে সুযোগটা তারা চাইছিলেন। কিন্তু না। সাদা কাপড়গুলো হয় গোলার আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল, কিংবা রক্তে লাল হয়ে গেল।
শুজাইয়ের বাসিন্দা উম্মে ওয়েল মানসুর বলেন, আমি ১৯৬৭ সালের যুদ্ধ দেখেছি। কিন্তু এই যুদ্ধের ভাষা বর্ণনা করা যায় না। এটা সাব্রা ও শাতিলার গণহত্যার চেয়েও নৃশংস। তিনিও অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন ওই দিনের হামলা থেকে।
তিনি জানান, নিরাপদ স্থান কোথাও ছিল না। আমরা আমাদের বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছি, কারণ তপ্ত বৃষ্টির ফোঁটার মতো ট্যাঙ্কের গোলা পড়ছিল।
তিনি যখন পালাচ্ছিলেন, তখন নারী, পুরুষ, শিশুদের বিধ্বস্ত লাশের সারি পড়ে থাকতে দেখেছেন রাস্তায়। তাদের সাহায্য করার মতো কেউ ছিল না।
মোহাম্মদ আল শেখ খাইল কিন্তু এখনো ছটফট করছেন। তার স্বজনদের সবার লাশ এখনো সরানো হয়নি। যুদ্ধবিরতি হলে তবেই তিনি বাকিদের লাশ খোঁজার জন্য বাড়ি যেতে পারবেন। তার সাত কাজিনের সবাই নিহত হয়েছে। ইসরাইলি বর্বরতা। লাশগুলো দাফনও কেউ করতে পারছে না।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন