পবিত্র ঈদুল আযহা
ও কুরবানীর শিক্ষা
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
ঈদুল আয্হা মুসলিম জাতির অন্যতম প্রধান
ধমীয় উৎসব। ঈদুল আযহার অপর নাম কুরবানীর ঈদ। আরবী ‘কুরবুন’ থেকে ‘কুরবানী’ শব্দের উৎপত্তি। যার অথ ত্যাগের মাধ্যমে
নৈকট্য লাভ। প্রতিবছর চান্দ্রমাসের ১০ যিলহজ্ব ঈদুল আযহা বিশ্বের মুসলমানদের নিকট
উপস্থিত হয় কুরবানীর অফুরন্ত আনন্দ সওগাত ও ত্যাগের উজ্জ্বল মহিমা নিয়ে। এই মমে
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন, ‘ফাসাল্লি লিরাবিবকা ওয়ানহার’ অথাৎ তোমার প্রতিপালকের
জন্য নামায পড় এবং কুরবানী কর। (সূরা আল-কাউসারঃ ২) হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে, সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ্
(সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেন,
‘‘এ
কুরবানীগুলো কি?’’
তিনি জবাব দিলেন, ‘তোমাদের পিতা
ইব্রাহিমের (আ.) সুন্নত।’
(ইবনে মাযাহ)
ঈদুল আযহা বা কুরবানীর ঈদ পালনের সাথে
একটি অনন্য পরীক্ষার ঘটনা বিজড়িত। আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর পূর্বে মুসলিম জাতির
পিতা হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর মাধ্যমে এ ধর্মীয় অনুষ্ঠান শুরু হয়। হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর
জান-মাল ছিল আল্লাহ্ তা’আলার সন্তুষ্টি লাভের
জন্য নিবেদিত। হযরত ইব্রাহিম (আ.) সর্বাপেক্ষ প্রিয়বস্ত্ত কুরবানী করার জন্য
আল্লাহ্ পাক কর্তৃক আদিষ্ট হন। এটি ছিল হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর জীবনের কঠোরতম
অগ্নিপরীক্ষা। নতশিরে এ নির্দেশ মেনে নিয়ে প্রিয়তম সন্তান ইসমাঈলকে কুরবানী করতে
উদ্যত হলেন তিনি। আল্লাহ্ পাক হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর কুরবানী কবুল করলেন। তরুণ
ইসমাঈল (আ.) যবেহ হলেন না,
ইসমাঈলের স্থলে বেহেশত
থেকে আনিত দুম্বা যবেহ হয়ে গেল আল্লাহ্র কুদরতে।
আল্লাহ্ তা’আলার এরূপ নির্দেশের মাধ্যমে হযরত
ইব্রাহিম (আ.) এর খোদাপ্রেমের নিষ্ঠা যাচাই করতে চেয়েছিলেন। হযরত ইব্রাহিম (আ.), বিবি হাজেরা ও ইসমাঈল
(আ.) খোদাপ্রেম ও আত্মত্যাগের এ চরম পরীক্ষায় পূর্ণাঙ্গভাবে কামিয়াব হয়েছিলেন।
হযরত ইব্রাহিম (আ.) বলিষ্ঠ কণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘‘ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকী ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া
মামাতী লিল্লাহি রাবিবল আরামীন’’ অর্থাৎ নিশ্চয়ই আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও মৃত্যু সব
কিছুই বিশ্বপ্রতিপালক আল্লাহ্র জন্য নিবেদিত।
সেই আশ্চর্যপূর্ণ ঘটনা স্মরণ করে প্রতিবছর
মুসলমানগণ ঈদুল আযহা পর্ব উদযাপন করে থাকে। যিলহজ্ব চাঁদের দশম তারিখে জামাতে ঈদুল
আযহার নামায সমাপনের পর সঙ্গতিসম্পন্ন মুসলমানগণ গরু, ছাগল, ভেড়া, উট বা দুম্বা প্রভৃতি
পশু কুরবানী করেন। এ পবিত্র ঈদ উপলক্ষে মুসলমানগণ শুধু আনন্দ উপভোগ করে না, দীন দুঃখীকে নির্দিষ্ট
পরিমাণ কুরবানীর গোস্ত,
রুটি ও চামড়া
বিক্রয়লব্ধ অর্থ দান করে প্রচুর পুণ্য অর্জন করেন। সমাজের গরীব-দুঃখী মানুষের মন
সেদিন আনন্দে আহ্লাদিত হতে থাকে।
মানুষের জীবনে সকল জিনিসের চেয়ে আল্লাহ্
এবং তাঁর নির্দেশকে সর্বাগ্রে স্থান দেয়ার শিক্ষা রয়েছে এ কুরবানীতে। আল্লাহ্
রাববুল আলামীনের সন্তুষ্টির জন্য জীবনের প্রিয়তম বস্ত্তকে হারাতে হলেও তা থেকে
পিছিয়ে যাওয়া যাবে না। এ মহান আত্মত্যাগের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই মুসলিম উম্মাহ্র
মাঝে কুরবানী প্রচলন হয়। কাম, ক্রোধ, লোভ, লালসা প্রভৃতি খোদাপ্রেম বিরোধী রিপুগুলোকে আল্লাহ্ তা’আলার নির্দেশ অনুযায়ী
বশ ও দমন করার শিক্ষা রয়েছে এ কুরবানীতে। প্রতিবছর ঈদুল আযহা মুসলিম জাহানে এসে
মুসলিম জাতির ঈমানী দুর্বলতা, চারিত্রিক কলুষতা দূর করে ত্যাগের উজ্জ্বল মহিমায় তাদের
ঈমানী শক্তিকে বলিয়ান,
নিখুঁত ও মজবুত করে।
মুসলমানগণ এ কুরবানীর মাধ্যমে সমাজে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার দীক্ষা নেয়, সমাজের বুক থেকে অসত্য, অন্যায়, দুর্নীতি ও অশান্তি দূর
করার জন্য নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দেয়ার প্রেরণা লাভ করে। এ প্রেক্ষিতে জাতীয় কবির
ভাষায় বলা হয়েছেঃ ‘কোরবানী হত্যা নয়, সত্যাগ্রহ শক্তির
উদ্বোধন।’
ঈদুল আযহার যে কুরবানী তার মাধ্যমে
মানুষের মনের পরীক্ষা হয়,
কুরবানীর রক্ত-মাংস
কখনোই আল্লাহ্র কাছে পৌঁছায় না। শুধু দেখা হয় মানুষের হৃদয়কে। ঈদের মধ্যে আছে
সাম্যের বাণী,
সহানুভূতিশীল হৃদয়ের
পরিচয়। পরোপকারের ও ত্যাগের মহান আদর্শে অনুপ্রাণিত হয় মানুষের মন। এই মর্মে
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন, ‘‘কুরবানীর জীবের রক্ত-মাংস কোনটাই আল্লাহ্র
নিকট পৌঁছে না,
বরং পৌঁছে তোমাদের খোদাভীতি
ও আন্তরিকতা।’’
আল্লাহ্ রাববুল আলামীন
আমাদের সকলকে পবিত্র ঈদুল আযহার আত্মত্যাগ ও কুরবানীর মহান আদর্শে উদ্বুদ্ধ করে
মানব ও সৃষ্টির সেবায় নিয়োজিত করার শিক্ষা গ্রহণের তাওফিক দান করুন। আমীন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন