রামাযান : কৃচ্ছ্রতা
ও শুদ্ধতার সওগাত
পবিত্র মাহে রামাযানের এক মাস সিয়াম সাধনা মানবজীবনে শুদ্ধতা লাভের এক সূবর্ণ সুযোগ এনে দেয়। মহৎ চারিত্রিক গুণাবলী অর্জন ও সত্যবোধকে জাগ্রত করার জন্য সংযম ও কৃচ্ছ্রতার ভূমিকা ব্যাপক। সাওম মানে বিরত থাকা। কুকর্ম , কুচিন্তা ও ইন্দ্রিয় পরিচর্যা পরিহার করে সংযমী হওয়াই রোযার শিক্ষা। রামাযানের শাব্দিক অর্থ দগ্ধ করা। সিয়াম সাধনার উত্তাপে; ধৈর্যের অগ্নিদহনে মুসলমান মাত্রই এ মাসে কুপ্রবৃত্তিকে দগ্ধ করে শুদ্ধ পরিশোধিত মানুষে পরিণত হয়। এই জন্যই এমাসের নাম রামাযান রাখা হয়েছে । তাই রামাযানুল মুবারক দৈহিক, আত্মিক, নৈতিক ও সামাজিক পরিশুদ্ধির প্রশিক্ষণের মাস। দিনের বেলা রোযা ও রাতের বেলা ইবাদতের মাধ্যমে মানুষ দেহ-মনকে পরিশুদ্ধ করতে পারে এ রামাযান মাসে। পবিত্রতা ও পরিশুদ্ধতার জন্য সিয়াম পালিত হয়ে থাকে।
সিয়াম
পালিত হয়;
(১) আত্বশুদ্ধির জন্য,
(২) পরিচ্ছন্নতার
জন্য,
(৩) সত্যবোধকে
জাগ্রত রাখার জন্য,
(৪) পার্থিব আকাঙ্খাকে নিবৃত্ত
রাখার জন্য,
(৫) বিনয় এবং
নম্রতা প্রতিষ্ঠার জন্য,
(৬)সহমর্মিতা
ও সৌহার্দের চেতনা উজ্জ্বীবনের
জন্য এবং
(৭) সর্বোপরি
মহান প্রভু আল্লাহর
নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য।
আত্মিক পরিশুদ্ধি ; সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানুষ আত্মশুদ্ধি ও অধ্যাত্মিক পবিত্রতা অর্জন করে থাকে। আল্লামা ইবনুল কাইয়্যূম আল-জাওযী (রহ.) বলেন, “মানুষের আত্মিক ও দৈহিক শক্তি সংরক্ষণে রোযা অত্যন্ত কার্যকর। এক দিকে তা মানুষের পাশবিক চাহিদার প্রাবল্য থেকে মুক্ত করে তার দৈহিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিশ্চয়তা বিধান করে; অপরদিকে তা নৈতিক উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে আত্মিক সুস্থতা সাধন করে।” মাসব্যাপী রোযার মাধ্যমে মানুষের জৈবিক চাহিদা ও পাশবিক প্রবৃত্তি দুর্বল হয়ে যায়, মনুষ্যত্ব ও রূহানিয়ত সজীব ও জাগ্রত হয়। রিপুর তাড়নামুক্ত হয়ে মানুষ আল্লাহ প্রদত্ত বিবেক ও প্রজ্ঞার সদ্ব্যবহার করে সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারী হতে পারে। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানুষ সৎকর্মের প্রতি ধাবিত হওয়ার প্রণোদনা লাভ করে এবং অসদুপায়ে সম্পদ পুঞ্জিভূত করার মানসিকতা লোভ পায়। আমরা সিয়াম পালনের ক্ষেত্রে চিত্তশুদ্ধির কথা বলেছি। চিত্তশুদ্ধি কাকে বলে ? মানুষের চিত্ত সততই চঞ্চল। আমাদের চিত্তে নানা ধরনের ইচ্ছা জাগে এবং সেসব ইচ্ছার ভালো-মন্দ দুই-ই আছে। কিন্তু চিত্তকে শাসনে রেখে অপরাধের আগ্রহ থেকে মুক্ত রাখা অত্যন্ত কঠিন। এখন এই কঠিন কাজটি কিভাবে সাধন করতে হবে ? তার একটি প্রথাগত দিক-নির্দেশনা আমরা সিয়াম সাধনার মধ্যে পেয়ে থাকি। রামাযানের ব্যবহারিক নিয়ম-কানুনগুলো আমরা যদি পরিপূর্ণভাবে পালন করি তাহলে তার মধ্যদিয়ে চিত্ত শাসন সহজেই কার্যকর হয়। একজন মানুষ যদি সারাদিন আহার্য এবং পানীয় গ্রহণ না করে এবং সে সময়টুকুতে যদি সে মহান প্রভু আল্লাহ তাআলার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার সর্ববিধ কার্যক্রম গ্রহণ করে তাহলে তার চিত্তে পার্থিব আকাঙ্খা জাগবে না এবং অশুদ্ধ ও বিকল চিন্তায় চিত্ত ভারাক্রান্ত হবে না ।
দৈহিক পরিশুদ্ধি ; অতি ভোজন স্নায়ুকোষে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে। রোযা দেহের জন্য প্রতিষেধকের কাজ করে থাকে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন