সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গাজায় নিহত ৫শ’ ছাড়ালো


গাজায় অবিলম্বে অস্ত্রবিরতির আহ্বান নিরাপত্তা পরিষদের, নিহত ৫শছাড়ালো


জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ গাজায় অবিলম্বে অস্ত্রবিরতির আহবান জানিয়েছে। গাজা সংকট নিয়ে একটি জরুরি রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর এ আহবান জানানো হয়েছে। এদিকে গাজায় ইসরাইলের বর্বর হামলায় নিহতের সংখ্যা ৫শছাড়িয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন গাজায় ইসরাইলের গোলাবর্ষণকে নির্মম কাজবলে উল্লেখ করার পর নিরাপত্তা পরিষদের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের অভিযানে এখন পর্যন্ত মোট ৫০১ জন নিহত ও ৩ হাজার ১৩৫ জন আহত হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও রোববার গাজায় অবিলম্বে অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিকে মধ্যপ্রাচ্যে পাঠাচ্ছেন।

রোববার মাত্র একদিনে শতাধিক ফিলিস্তিনি ও ১৩ ইসরাইলি সৈন্য নিহত হওয়ার পর ওবামা ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে এ বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি ইসরাইলে হামাসের হামলারও নিন্দা জানান।

হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়, ওবামা গাজায় অসংখ্য বেসামরিক নাগরিক হতাহতে এবং ইসরাইলি সৈন্যের প্রাণহানিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বিবৃতিতে বলা হয়, ওবামা অবিলম্বে অস্ত্রবিরতির বিষয়ে ইসরাইল ও আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নিবিড়ভাবে কাজ করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। একই সঙ্গে তিনি গাজা ও ইসরাইলে বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষার বিষয়টিও তুলে ধরেন। তবে ওবামা ইসরাইলের নিজেকে রক্ষার অধিকার রয়েছে বলেও পুনরায় উল্লেখ করেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর থেকে বলা হয়েছে, কেরি গতকাল সোমবার কায়রো যাচ্ছেন। সেখানে তিনি গাজা বিষয়ে মিসরসহ অন্যান্য দেশের সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে অবিলম্বে অস্ত্রবিরতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবেন। গাজায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গতকাল সোমবার এখন পর্যন্ত ২০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে গাজার দক্ষিণাঞ্চলেই ১৬ জন নিহত হয়েছে।
সকালে গাজায় ইসরাইলের বিমান হামলায় একটি পরিবারের নয় সদস্য নিহত হয়েছে। এর মধ্যে সাতজনই শিশু। এছাড়া একটি মোটরবাইকে চালানো হামলায় অপর এক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আজকের প্রাণহানির সংখ্যা নিয়ে ১৪ দিনে ইসরাইলের হামলায় ৫০১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে তিন সহস্রাধিক।

৮ জুলাই থেকে গাজায় শুরু হওয়া ইসরাইলের হামলার ত্রয়োদশ দিন গতকাল রোববার সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়। এদিন শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়। তাদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ নারী ও শিশু। ইসরাইলের দাবি, রোববার অভিযানের সময় গাজার অভ্যন্তরে তাদের ১৩ সেনা নিহত হয়েছে। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার থেকে গাজায় শুরু হওয়া স্থল অভিযানের পর গতকাল পর্যন্ত ইসরাইলের ১৮ সেনা নিহত হলো।

জর্ডানের অনুরোধে রোববার রাতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন ডাকা হয়। জাতিসংঘে রুয়ান্ডার দূত ইউগেনা গাসান বলেন, গাজায় সহিংসতার মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সদস্য দেশগুলো। তিনি বলেন, প্রাণহানির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সদস্যরা বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষাসহ আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনেরও আহবান জানিয়েছেন। গাজার শেজায়া জেলায় ইসরাইলের ভারী গোলাবর্ষণে ৬০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস একেহত্যাযজ্ঞবলেছেন। তিনি জররি আলোচনার আহবান জানিয়ে বলেন, গাজার পরিস্থিতি সহ্য করার মতো না। তিনি ইসরাইলের হামলাকে মানবতার বিরুদ্ধেঅপরাধ উল্লেখ করেন। এদিকে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যতক্ষণ প্রয়োজন ততক্ষণঅভিযান অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছেন। তিনি বলেন, গাজার শেজায়াসন্ত্রাসীদের শক্ত ঘাঁটিএবং ইসরাইলে যেসব রকেট নিক্ষেপ করা হচ্ছে তার প্রাণকেন্দ্র।

নেতানিয়াহু বলেন, ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে প্রবেশ ছাড়া ইসরাইলি সৈন্যদের করার কিছু থাকছে না। তবে এর আগে স্থানীয়দের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছিল। হামাস রোববার সন্ধ্যায় বলেছে, তারা ইসরাইল প্রতিরক্ষা বাহিনীর এক সদস্যকে আটক করেছে। এতে গাজা ও পশ্চিম তীরের বিভিন্ন রাস্তায় লোকজনকে উত্সব করতে দেখা গেছে। তবে জাতিসংঘে ইসরাইলের দূত রন প্রোসর হামাসের এ দাবি নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ইসরাইলের কোন সৈন্য অপহৃত হননি এবং এসব তথ্য অসত্য। জাতিসংঘ জানায়, গাজায় এখন পর্যন্ত ৮৩ হাজার ৬৯৫ জন বাস্তুত্যুত হয়েছে এবং এ সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।

সমপ্রতি দখলকৃত পশ্চিম তীরে তিন ইসরাইলি কিশোর ও জেরুজালেমে এক ফিলিস্তিনি কিশোরকে হত্যার পর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ইসরাইলি তিন কিশোরকে হত্যার জন্য হামাসকে দায়ী করা হয়। তবে হামাস এ অভিযোগ প্রত্যার্খান করেছে। এর কয়েকদিন পর পূর্ব জেরুজালেমে এক ফিলিস্তিনি কিশোরকে অপহরণের পর পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ সন্দেহভাজন ৬ ইহুদিকে আটক করে। এরপর মূলত ইসরাইল ও হামাস পাল্টাপাল্টি হামলা শুরু করে।
গাজা থেকে ইসরাইলে জঙ্গিদের রকেট হামলা বন্ধে তেলআবিব কয়েকদিন ধরে ব্যাপক বিমান হামলা ও নৌঘাঁটি থেকে গোলাবর্ষণের পর বৃহস্পতিবার থেকে স্থল অভিযান শুরু করেছে।
ইসরাইলের অপারেশন প্রটেকটিভ এজ শুরুর পর এ পর্যন্ত হামাসের রকেট হামলায় দুই বেসামরিক ইসরাইলি নিহত হয়েছে।

১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইহুদিদের জন্য ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিতে ফিলিস্তিনিরা সংগ্রাম শুরু করে। এর পর থেকে নিয়মিত রক্ত ঝরলেও আজও তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভন্ড পীরের গোমর ফাক-২য় পর্ব

মাজারে সিজদা করা বৈধ কি ??? জিজ্ঞাসা : এক. ফেরেস্তারা হযরত আদমকে যেভাবে সম্মানপূর্বক সিজদা করেছিল সেভাবে বর্তমান যামানায় ওলী-আউলিয়াদের মাজারে সিজদা করা বা মাথা ঝুকানো জায়েজ কি না? জায়েজ না হলে প্রমাণ কী? দুই. সুন্নত তরিকায় কবর জিয়ারতের পদ্ধতি কী? বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ থাকব। জবাব : এক. ইবাদতের উদ্দেশ্যে আল্লাহ ছাড়া কাউকে সেজদা করা বা মাথা নোয়ানো কোনো কালেই বৈ ধ ছিল না। তবে সম্মান জ্ঞাপনার্থে সেজদা করা মাথা নোয়ানো পূর্ববর্তী যুগে বৈধ ছিল। কিন্তু ইসলাম ধর্মে শিরকের গন্ধ পর্যন্ত মিটিয়ে খালেস তাওহিদ প্রতিষ্ঠার্থে সম্মান সূচক সেজদা ও মাথা নোয়ানোও হারাম করে দেয়া হয়েছে। তাই ইসলাম ধর্মে কোনো ব্যাখাতেই ওলী-আউলিয়াগণের মাজারে-দরবারে সেজদা করা বা মাথা ঝুকানোর অবকাশ নেই। ফেরেস্তাগণ কর্তৃক স্বয়ং আল্লাহ পাকের হুকুমে আদম আ. এর প্রতি সম্মান প্রকাশার্থে সেজদা করার বিষয়টি আসমানী জগতের সাথে সম্পৃক্ত। এটি উর্দ্ধ জগতের বৈশিষ্ট। তার সাথে দুনিয়ার জগতের বিধি বিধান তুলনীয় নয়। সুতরাং এ দ্বারাও বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না। দুই. কবর জিয়ারতের ইচ্ছা হলে মুস্তাহাব হলো প্রথমে দুই ...

ভন্ড-বেদাতীর গোমরফাক ১ম পর্ব

রাসূল সা. হাজির নাজির কিনা ? প্রশ্ন: আস সালামু আলাইকুম , আশা করি ভাল আছেন , আমার প্রশ্ন , নবী করিম সা. হজির ও নাজির কি না ? যারা পক্ষে বলে তাদের দলিল হলো সূরা আহযাবের একটি আয়াতের শাহদান শব্দ। এই শব্দের ব্যখ্যা কি ? মেহেরবানী করে দলিল সহ উত্তর দিবেন।   উত্তর: হাজির ও নাজির শব্দদুটো আরবী। হাজির অর্থ বিদ্যমান বা উপস্থিত। আর নাজির অর্থ দ্রষ্টা। যখন এ শব্দ দুটিকে এক সাথে মিলিয়ে   ব্যবহার করা হয় তখন অর্থ হয় ঐ স্বত্তা যার অস্তিত্ব এক স্থানে সীমাবদ্ধ নয় , বরং তার অস্তিত্ব একই সময়ে গোটা দুনিয়াকে বেষ্টন করে রাখে এবং দুনিয়ার প্রত্যেকটি জিনিসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অবস্থা তার দৃষ্টির সামনে থাকে। পূর্বোক্ত ব্যখ্যা অনুসারে হাজির নাজির এটি একমাত্র আল্লাহ তায়ার সিফাত এবং তার জন্যই প্রযোজ্য , এমনকি নবী সা. বা কোন ওলী সব জায়গায় হাজির নাজির হতে পারে না। আল্লাহ তায়ালার সিফাতের সঙ্গে বান্দাকে মিলানো কুফর , শিরক ও চরম ভ্রষ্টতা। বিদাতীদের আক্বীদা মতে শুধু হুজুরে পাক সা. নন , বরং বুজুরগানে দ্বীনও পৃথিবীর সবকিছুকে হাতের তালুর মত দেখতে পান। তারা দূরের ও কাছের আওয়াজ শুনতে পান এবং হাজার হাজার মা...

রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলের সম্ভাব্য পরিণতি!!!

সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম তুলে দিলে আমরা যে সকল সমস্যার সম্মুখীন হতে পারি ➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖ শুধুমাত্র লাইক, কমেন্ট, শেয়ার, কপিই নয়! সম্ভব হলে লিফলেট ছেপে লেখাটি ছড়িয়ে দিন!! : রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলে সমস্যা কোথায়? প্রশ্নবানে জর্জরিত হচ্ছি, সমস্যা কোথায়? প্রশ্ন আসছে সব শ্রেণী থেকে। প্রথম কথা হচ্ছে, কেউ আমার হাত কাটলেও ব্যথা পাই, আঙুল কাটলেও। কারণ হাত-পা সবই আমার! ইসলামী বিধান প্রতিষ্ঠিত নাই বলে সংবিধান থেকেও মুছে দিতে হবে? হাত কাটা রুখতে পারি নি বলে পা কাটারও সুযোগ দেবো? কারো শরীরে অনুভূতি না থাকলে সেটা তার ব্যাপার, আমি কালিমা পড়েছি, দ্বীনের যে কোন বিষয়ে আঘাত আসলে আমার কলিজায় লাগে! এবার আসল কথায় ফিরে যাই; ক. ইসলামী শরী’আহ হচ্ছে কোন বিধান পালন না করলে আপনি গুনাহগার, বেঈমান নন, কিন্তু অস্বীকার করলে বেঈমান। সংবিধান থেকে সরিয়ে দেওয়ার অর্থ হচ্ছে আপনি অস্বীকার করছেন! খ. বুদ্ধিমানদের কাজ হচ্ছে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া, আপনি কামাল আতার্তুকের তুরস্কের ইতিহাস পড়ুন, বুঝবেন কেন আমাদের এতো মাথাব্যথা! গ. প্রধানমন্ত্রী তনয় ও আইটি উপদেষ্টা জয় সাহেবের সে বক্তব্...