সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

স্বদেশঃ বোরকাও অপরাধ ?


পিরোজপুরের একটি মাদরাসা থেকে বোরকাবৃত তিন তরুণীকে গ্রেফতার করা হয়েছে গত ৩ জুলাই। সংবাদমাধ্যমগুলোর সূত্রে জানা গেছে, কোনো অপরাধ ছাড়াই গ্রেফতারকৃত তরুণীদেরকে প্রথমে রিমাণ্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ করার মতো কোনো অভিযোগ ও তথ্য না পাওয়া সত্ত্বেও টি.এফ.আই সেলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে। সবশেষে ২১ জুলাই আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের জামিন বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। জানা নেই, গ্রেফতারকৃত বোরকাপরা এই তিন তরুণীর ভাগ্যে কী রয়েছে! (শেষ খবর পাওয়া পর্যন- ২২ জুলাই তারা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।) তবে শেষ পর্যন- যাই হোক, তাদের গ্রেফতারের বিষয়টি দেশের সংস্কৃতিতে নানা কারণে এমনই একটি ভয়ংকর পর্যায় ও মাত্রা যোগ করেছে যে, সেটি এ জাতির ধর্মচর্চা, ধর্মীয় সংস্কৃতি লালন ও শালীনতার বিরুদ্ধে একটি গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করে দিয়ে গেছে বললে ভুল হবে না। সংবাদমাধ্যমগুলোর মাধ্যমে জানা গেছে, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়-য়া এবং এক স্কুল শিক্ষিকা তিন তরুণী হেঁটে যাওয়ার পথে প্রভাব ও ক্ষমতাশালী ছাত্র সংগঠনের বখাটে কিছু তরুণ তাদের উত্যক্ত করা শুরু করে। তারা ছিলেন বোরকাবৃত এবং ওই জায়গাটির নাম ছিল জিয়ানগর। অশালীনতা, লাঠালাঠি ও মারদাঙ্গার ঐতিহ্য ধারণকারী ছাত্র সংগঠনের তরুণদের দ্বারা উত্যক্ত হয়ে ভীত-সন্ত্রস্তবস্হা তারা পাশ্ববর্তী একটি মাদরাসায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। তখনই হতোদ্যম বখাটে তরুণেরা এদের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদের অভিযোগ তুলে পুলিশে খবর দেয়। এরপর ৫৪ ধারায় তাদের গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পুলিশ। এখানে দেখা যায়, বখাটে তরুণরা যেমন পুলিশকে বাধ্য করার মতো একটি রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত, তেমনি তরুণী তিনজনও প্রভাবশালীদের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক রোষানলে পড়ার মতো একটিইসলামীসংগঠনের ছাত্রীকর্মী হিসেবে পরিচিত।কিন্ত স্হানীয়দের ভাষায় তারা পরিচিত এবং কোনো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন। তারপরও কেবল বোরকাপরাহওয়ার কারণে তাদের নিয়ে হেনস্তা ও রহস্যের খেলা শুরু হয়ে যায়। ৩ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত তাদেরকে ঘিরে পুলিশ, প্রশাসন, স্হানীয় বিচারালয় সব জায়গাতেই একের পর এক নিয়ম ও ঐতিহ্য বিরোধী ভূমিকা গৃহীত হতে থাকে। বোরকাবৃত এই তরুণীদেরকে গ্রেফতার করার পর ঘটনাটির রাজনৈতিক রূপ ও রঙ বিচিত্র মাত্রা ধারণ করলেও সবচেয়ে মারাত্মক যে ঘটনাটি ঘটানো হয় তাতে এককথায় মুসলিম নারীর সম্ভ্রম ও শালীনতার শুভ্র চাদরে চরমভাবে অবমাননার কালি লেপে দেওয়া হয়েছে। স'ানীয় থানা থেকে কোর্টে নেওয়া এবং কোর্ট থেকে কারাগারে নেওয়ার সময় বোরকাবৃত ওই তিন তরুণীর দেহ থেকে বোরকা অপসারণ করতে বাধ্য করা হয়। বোরকা ও হিজাববিহীনভাবে তাদেরকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় স্হানান্তর করানো হয় পুলিশি পাহারায়, আইনী সংস্কৃতির আবরণে। এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা কেবল এদেশে নয়, সমকালীন পৃথিবীর কোনো অ-মুসলিম-প্রধান দেশেও ঘটেছে বলে জানা যায় না। আমাদের কথা এখানেই। বোরকাবৃত এই তিন তরুণী কোন্ সংগঠন করেন আমরা তা দেখতে চাই না। তারা কতটুকু অপরাধী কিংবা নিরপরাধ তা-ও আদালতে প্রমাণ হোক। বোরকা ও পর্দায় শরীর ঢেকে চলতে অভ্যস- ও ইচ্ছুক তিনজন মুসলিম তরুণীর বোরকা উন্মোচনের ধৃষ্টতা দেখালো প্রশাসনের কোন্ অংশ এবং কেন-আমরা মনে করি, এই মুসলিমপ্রধান দেশে তার কঠোর বিচার হওয়া উচিত। না, আমরা এর জন্য কোনো তদন- কমিশন গঠনের খেলাও দেখতে নিরাগ্রহী। ঘটনাটি ঘটেছে এবং ঘটানো হয়েছে। যারা ঘটিয়েছে, তারা সবার সামনে আছে। আইন-আদালত, গ্রেফতার-অভিযোগের দোহাই দিয়ে এদেশের কোনো মুসলিম নারীর শরীর থেকে বোরকা খুলে নেওয়ার ঘটনা মেনে নেওয়া অসম্ভব। এভাবে চলতে দিলে এদেশের শালীন জীবনে অভ্যস- কোটি নারীর বোরকা ও পর্দার চাদরে বর্বর পশুদের পাশবিক হাত এগিয়ে যেতে আর কাঁপবে না। পশুদের পাশবিক হাতকে যদি অকম্পিত থাকতে দেওয়া হয় তাহলে সমাজে মানুষ বাস করতে পারবে না। বোরকা ও পর্দার জীবনে যারা অভ্যস- তারা এবং যারা এখনও অভ্যস- হননি তাদের কারোরই এটা কাম্য হতে পারে না। ফ্রান্স, বৃটেনসহ পৃথিবীর কোনো কোনো দেশে মেয়েরা হিজাব পরে বিদ্যালয়ে যেতে পারবে কি না-সে সিদ্ধান- নিয়ে অনৈতিক বিতর্ক ও মামলা চালাচালির ঘটনা আমরা দেখেছি। কিন' সেসব স'ানেরও কোথাও কারো শরীর থেকে প্রশাসনিক উদ্যোগে হিজাব বা বোরকা খুলে ফেলা হয়েছে এমন ঘটনা আমাদের নজরে পড়েনি। আমরা এ ঘটনায় এ দেশের শালীন নারীসমাজের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন ও অতি পাশবিক কোনো পদক্ষেপের ঘনঘটার গন্ধ পাচ্ছি।
অবশ্য ঘটনাটি ২০০৯সালের ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলের সম্ভাব্য পরিণতি!!!

সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম তুলে দিলে আমরা যে সকল সমস্যার সম্মুখীন হতে পারি ➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖ শুধুমাত্র লাইক, কমেন্ট, শেয়ার, কপিই নয়! সম্ভব হলে লিফলেট ছেপে লেখাটি ছড়িয়ে দিন!! : রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলে সমস্যা কোথায়? প্রশ্নবানে জর্জরিত হচ্ছি, সমস্যা কোথায়? প্রশ্ন আসছে সব শ্রেণী থেকে। প্রথম কথা হচ্ছে, কেউ আমার হাত কাটলেও ব্যথা পাই, আঙুল কাটলেও। কারণ হাত-পা সবই আমার! ইসলামী বিধান প্রতিষ্ঠিত নাই বলে সংবিধান থেকেও মুছে দিতে হবে? হাত কাটা রুখতে পারি নি বলে পা কাটারও সুযোগ দেবো? কারো শরীরে অনুভূতি না থাকলে সেটা তার ব্যাপার, আমি কালিমা পড়েছি, দ্বীনের যে কোন বিষয়ে আঘাত আসলে আমার কলিজায় লাগে! এবার আসল কথায় ফিরে যাই; ক. ইসলামী শরী’আহ হচ্ছে কোন বিধান পালন না করলে আপনি গুনাহগার, বেঈমান নন, কিন্তু অস্বীকার করলে বেঈমান। সংবিধান থেকে সরিয়ে দেওয়ার অর্থ হচ্ছে আপনি অস্বীকার করছেন! খ. বুদ্ধিমানদের কাজ হচ্ছে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া, আপনি কামাল আতার্তুকের তুরস্কের ইতিহাস পড়ুন, বুঝবেন কেন আমাদের এতো মাথাব্যথা! গ. প্রধানমন্ত্রী তনয় ও আইটি উপদেষ্টা জয় সাহেবের সে বক্তব্...

‘হুদ হুদ’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত

ঘূর্ণিঝড় ‘ হুদ হুদ ’ উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এটি অবস্থান করছে পশ্চিম মধ্যবঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পূর্ব মধ্যবঙ্গোপসাগর এলাকায়। ·          অগ্রসর হচ্ছে ‘ হুদ হুদ ’, সাগরে সতর্কতা সংকেত ·            ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম , কক্সবাজার , মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সর্তকতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার বুলেটিনে এ তথ্য দেওয়া হয়। এতে বলা হয় , ঘূর্ণিঝড়টি সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে , কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯১০ কিমি দক্ষিণপশ্চিমে , মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৮০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৮৭০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছে। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। এ সময় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কিমি থেকে ...

ভন্ড-বেদাতীর গোমরফাক ১ম পর্ব

রাসূল সা. হাজির নাজির কিনা ? প্রশ্ন: আস সালামু আলাইকুম , আশা করি ভাল আছেন , আমার প্রশ্ন , নবী করিম সা. হজির ও নাজির কি না ? যারা পক্ষে বলে তাদের দলিল হলো সূরা আহযাবের একটি আয়াতের শাহদান শব্দ। এই শব্দের ব্যখ্যা কি ? মেহেরবানী করে দলিল সহ উত্তর দিবেন।   উত্তর: হাজির ও নাজির শব্দদুটো আরবী। হাজির অর্থ বিদ্যমান বা উপস্থিত। আর নাজির অর্থ দ্রষ্টা। যখন এ শব্দ দুটিকে এক সাথে মিলিয়ে   ব্যবহার করা হয় তখন অর্থ হয় ঐ স্বত্তা যার অস্তিত্ব এক স্থানে সীমাবদ্ধ নয় , বরং তার অস্তিত্ব একই সময়ে গোটা দুনিয়াকে বেষ্টন করে রাখে এবং দুনিয়ার প্রত্যেকটি জিনিসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অবস্থা তার দৃষ্টির সামনে থাকে। পূর্বোক্ত ব্যখ্যা অনুসারে হাজির নাজির এটি একমাত্র আল্লাহ তায়ার সিফাত এবং তার জন্যই প্রযোজ্য , এমনকি নবী সা. বা কোন ওলী সব জায়গায় হাজির নাজির হতে পারে না। আল্লাহ তায়ালার সিফাতের সঙ্গে বান্দাকে মিলানো কুফর , শিরক ও চরম ভ্রষ্টতা। বিদাতীদের আক্বীদা মতে শুধু হুজুরে পাক সা. নন , বরং বুজুরগানে দ্বীনও পৃথিবীর সবকিছুকে হাতের তালুর মত দেখতে পান। তারা দূরের ও কাছের আওয়াজ শুনতে পান এবং হাজার হাজার মা...