সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শরীর চর্চার গুরুত্ব

প্রশ্নঃ- হাফিজ মাহবুবুর রহমান
আপনার কাছে একটা প্রশ্ন কোরআন হাদীসে কি শরীরের ব্যায়াম সম্পর্কে কোন আয়াত অথবা হাদীস আছে যদি থেকে তাকে তাহলে বিস্তারিত বলবেন ???
উত্তরঃ- শরীরকে সুস্থ এবং মনকে নির্মল রাখতে হলে নিয়মিত শরীর চর্চা অর্থাৎ ব্যায়াম করতে হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন, শিশুকাল থেকে শুরু করে বৃদ্ধকাল পর্যন্ত সবারই শারীরিক সুস্থতার জন্য ব্যায়াম করা দরকার। একটি পূর্ণাঙ্গ ধর্ম হিসেবে ইসলামেও শরীর চর্চার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নিজে নিয়মিত ব্যায়াম করতেন। এছাড়া তিনি নির্দোষ খেলাধুলা, ঘোড়দৌঁড়, কুস্তি ও তীর নিক্ষেপ চর্চার জন্য অন্যদেরকে উপদেশ দিতেন। তিনি বলেছেন, পিতার ওপর সন্তানের অধিকার হলো হলো, পিতা সন্তানকে লেখাপড়া, সাঁতার ও তীর-চালনা শেখাবে।
শারীরিক শক্তি হচ্ছে, আল্লাহতায়ালার অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। এজন্য রাসূল (সাঃ) বলেছেন-‘যে ঈমানদার ব্যক্তির শারীরিক শক্তি আছে, তিনি শ্রেষ্ঠ ও আল্লাহর নিকট প্রিয়।' কারণ ইবাদত করার জন্য শারীরিক শক্তি প্রয়োজন। আল্লাহর পথে সংগ্রাম করার জন্যও শক্তি প্রয়োজন। তিনি আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে তার জন্য অর্থ-সম্পদের চেয়ে স্বাস্থ্যই বেশী মূল্যবান। রাসূল (সাঃ) পাঁচটি অমূল্য সম্পদ হারানোর পূর্বে পাঁচটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়ার কথা বলেছেন। এগুলোর একটি হলো, রোগাক্রান্ত হবার পূর্বে স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেয়া। স্বাস্থ্য ঠিক না থাকলে মানবদেহ দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে বার্ধক্য আসার পূর্বেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে নিশ্চিত মৃত্যুমুখে পতিত হতে হয়। এ জন্য শরীরের প্রতি যত্ম নেয়ার প্রতি রাসূলে খোদা গুরুত্ব দিয়েছেন। এক সাহাবী সারাদিন রোজা রাখতেন আর রাতভর নামাজ পড়তেন। রাসূল (সাঃ) তাকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘নিশ্চয় তোমার ওপর তোমার শরীরের হক আছে।'
আজকের শিশুরাই আগামী দিনের প্রস্ফুটিত ফুল। এরাই দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। তাই তাদের সুস্থ, সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠা একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু শিশুরা নানা ধরনের অসুখ-বিসুখে ভোগে। এসব রোগ থেকে বেঁচে থাকার জন্য দিনে অন্ততপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা প্রয়োজন। ব্যায়াম বলতে স্কুলের পিটি, প্যারেড কিংবা খেলাধুলাও হতে পারে। স্কুলের পরে এবং রাতে খাবারের আগে শিশুদেরদের অবশ্যই শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা উচিত। শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য সংসারের ছোটখাট কাজও করা যেতে পারে। এতে শিশুর মনোবল দৃঢ় হবে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়বে ।
প্রশ্ন আসতে পারে, শিশুরা কি ধরনের ব্যায়াম করবে ? এ ব্যাপারে চিকিতসকরা বলে থাকেন, বিভিন্ন খেলাধুলা যেমন- হাডুডু, ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, বাস্কেটবল, সাইকেল চালানো, টেনিস, সাঁতার কাটা, জগিং, হাঁটা, দৌড়ানো প্রভৃতির মাধ্যমে শিশুরা শরীর চর্চা করতে পারে। তবে এসব করতে গিয়ে পড়াশুনার ক্ষতি করা যাবে না। সব কিছু করতে হবে নিয়মমাফিক। অর্থাত পড়ার সময় পড়া এবং খেলার সময় খেলাধুলা করলেই উভয়ক্ষেত্রে সফলতার দেখা পাওয়া যাবে।
তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে, ব্যায়াম করতে যেয়ে যেন কখনও নামাজ কাজা না হয় । সতর আগলা না হয় এবং বাজী ধরা না হয় । যা ইসলামী শরিয়াতে সম্পুরণ হারাম ।
ছোট্টবন্ধুরা সহপাঠিদের ও বন্ধুদের সাথে কুস্তি কিংবা পাঞ্জা লড়ো অথবা শক্তি পরীক্ষার জন্য অন্য নানাধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এসব শক্তি পরীক্ষায় কেউ বিজয়ী হলে তার খুশীর সীমা থাকে না। রাসূল (সাঃ) এর যুগেও একবার দুই কিশোরের মধ্যে কুস্তি প্রতিযোগিতা হয়েছিল। এক যুদ্ধের আগে রাসুলেখোদা তার বাহিনীতে যোগদানে ইচ্ছুকদের শারীরিক সামর্থ যাচাই এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের মূল বাহিনী থেকে আলাদা করছিলেন। এদের মধ্যে রাফে ও সামারাহ নামক দুটি কিশোরও ছিল। তাদেরকে যখন সেনাবাহিনী থেকে আলাদা করে দেয়া হচ্ছিল, তখন রাফে তার পায়ের অগ্রভাগের ওপর ভর করে দাঁড়ালো। যেন লম্বায় তাকে কিছু বড় দেখায় এবং তাকে যুদ্ধে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়। এই কৌশলের মাধ্যমে সে সেনাবাহিনীতে যোগদানের সুযোগ পায়। কিন্তু সামারাহ সেনাবাহিনীতে থাকার অনুমতি না পেয়ে রাসূল (সাঃ) এর কাছে গিয়ে বললো, হে রাসূলুল্লাহ! রাফেকে যখন সেনাবাহিনীতে থাকার সুযোগ দিচ্ছেন তখন আমাকেও থাকার অনুমতি দিন । কারণ আমি তাকে কুস্তি প্রতিযোগিতায় পরাজিত করতে পারি।' এ কথা শুনে রাসূল (সাঃ) তাদের দু'জনের মধ্যে কুস্তির আয়োজন করলেন। তুমুল লড়াইয়ের পর সামারাহ রাফেকে পরাজিত করলো। রাসূলেখোদা খুশী হয়ে তাকেও সেনাবাহিনীতে নিয়ে নিলেন।
এ ঘটনাটি থেকে আমরা শারীরিক শক্তির গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারলাম। তো আমরা সবাই শক্তিশালী হবার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করবো এ কামনায় গুটিয়ে নিচ্ছি আজকের প্রয়াস।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

‘হুদ হুদ’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত

ঘূর্ণিঝড় ‘ হুদ হুদ ’ উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এটি অবস্থান করছে পশ্চিম মধ্যবঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পূর্ব মধ্যবঙ্গোপসাগর এলাকায়। ·          অগ্রসর হচ্ছে ‘ হুদ হুদ ’, সাগরে সতর্কতা সংকেত ·            ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম , কক্সবাজার , মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সর্তকতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার বুলেটিনে এ তথ্য দেওয়া হয়। এতে বলা হয় , ঘূর্ণিঝড়টি সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে , কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯১০ কিমি দক্ষিণপশ্চিমে , মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৮০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৮৭০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছে। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। এ সময় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কিমি থেকে ...

রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলের সম্ভাব্য পরিণতি!!!

সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম তুলে দিলে আমরা যে সকল সমস্যার সম্মুখীন হতে পারি ➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖ শুধুমাত্র লাইক, কমেন্ট, শেয়ার, কপিই নয়! সম্ভব হলে লিফলেট ছেপে লেখাটি ছড়িয়ে দিন!! : রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলে সমস্যা কোথায়? প্রশ্নবানে জর্জরিত হচ্ছি, সমস্যা কোথায়? প্রশ্ন আসছে সব শ্রেণী থেকে। প্রথম কথা হচ্ছে, কেউ আমার হাত কাটলেও ব্যথা পাই, আঙুল কাটলেও। কারণ হাত-পা সবই আমার! ইসলামী বিধান প্রতিষ্ঠিত নাই বলে সংবিধান থেকেও মুছে দিতে হবে? হাত কাটা রুখতে পারি নি বলে পা কাটারও সুযোগ দেবো? কারো শরীরে অনুভূতি না থাকলে সেটা তার ব্যাপার, আমি কালিমা পড়েছি, দ্বীনের যে কোন বিষয়ে আঘাত আসলে আমার কলিজায় লাগে! এবার আসল কথায় ফিরে যাই; ক. ইসলামী শরী’আহ হচ্ছে কোন বিধান পালন না করলে আপনি গুনাহগার, বেঈমান নন, কিন্তু অস্বীকার করলে বেঈমান। সংবিধান থেকে সরিয়ে দেওয়ার অর্থ হচ্ছে আপনি অস্বীকার করছেন! খ. বুদ্ধিমানদের কাজ হচ্ছে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া, আপনি কামাল আতার্তুকের তুরস্কের ইতিহাস পড়ুন, বুঝবেন কেন আমাদের এতো মাথাব্যথা! গ. প্রধানমন্ত্রী তনয় ও আইটি উপদেষ্টা জয় সাহেবের সে বক্তব্...

একটি অন্যায় কাজ

  ‘ বিসমিল্লাহ ‘ ও ‘ দরূদ ’ অশুদ্ধ বা অসম্পূর্ণ বলা ও লেখা প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ কাজের শুরুতে ‘ আল্লাহর যিকর ’ মাসনূন। যে কাজের সূচনায় শরীয়ত যে যিকর নির্দেশ করেছে সে কাজের জন্য ঐ যিকরই মাসনূন। অনেক কাজে ‘ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম ’ বলা বা লেখার নির্দেশনা রয়েছে। শরীয়তে তা মাসনূন। বিধানগত বিচারে এটা মাসনূন বা মুস্তাহাব হলেও এর তাৎপর্য অত্যন- গভীর। সংক্ষেপে বলা যায় যে , এর দ্বারা বান্দা নতুন করে এর অঙ্গিকার। আল্লাহ তাআলার নেয়াতমসমূস স্মরণ করে এবং আল্লাহর দিকে রুজূ করে কাজের মধ্যে দুরুস্তি   ও খায়র ও বরকতের দরখাস্ত   করে। এজন্য এই আমল গুরুত্বের সঙ্গে করা চাই। আর যেহেতু এতে মাহবূবে হাকীকী আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পবিত্র নাম রয়েছে তাই গভীর শ্রদ্ধা ও মহাব্বতের সঙ্গে তা আদায় করা চাই। পূর্ণ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম তাজবীদ ও ইখলাসের সঙ্গে পাঠ করা চাই , শুধু রসম পুরা করার জন্য না হওয়া চাই। পরিতাপের বিষয় এই যে , আমাদের মধ্যে অনেককে অনেক সময় দেখা যায় , যারা বিসমিল্লাহ এমনভাবে পাঠ করে থাকেন , যেন তা একটি অতিরিক্ত কাজ। মূল কাজ হল যা শুরু করা হচ্ছে। বলাবাহুল্য ,...